এই মুহূর্তে দেশের প্রথমসারির গায়কদের (Singer) মধ্যে অন্যতম হলেন অরিজিৎ সিং (Arijit Singh)। বাংলার ভূমিপুত্র এই গায়কের কন্ঠে স্বয়ং মা সরস্বতীর বাস। তাঁর মায়াবী গানের গলায় এমনই এক জাদু আছে যার নেশায় বুঁদ কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী গোটা দেশবাসী। তবে শুধু দেশ নয়,দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিশ্বের কোণায়,কোণায় ছড়িয়ে রয়েছেন অরিজিৎ ভক্তরা।
বলতে গেলে এই মুহূর্তে সাফল্যের একেবারে শিখরে বিরাজ করছেন গায়ক। কিন্তু তারপরেও আজও অহংকার শব্দটা ছুঁতে পারেনি তাঁকে। নাম-যশ-টাকা-পয়সা-খ্যাতি কোন কিছুরই অভাব নেই অরিজিতের। কিন্তু তারপরেও গায়কের অত্যন্ত সাধারণ মানের জীবন যাপন বারবার মুগ্ধ করেছে তাঁর অনুরাগীদের। তাই অরিজিতের শিল্পী সত্তাকেও ছাপিয়ে যায় তাঁর মাটির মানুষের মত আচরণ।
তাঁর এই সহজ সরল জীবনযাপন নিমেষে ছুঁয়ে ফেলে কোটি কোটি ভক্তদের হৃদয়। তাই সাফল্যের চূড়ায় বসেও কিভাবে মাটিতে পা রেখে চলা যায় তা শিখতে হয় এই শিল্পীর কাছ থেকে। আর এখানেই বাকি সবার থেকে একেবারে আলাদা জিয়াগঞ্জের এই ভূমিপুত্র। কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েও অরিজিতের সাধারণ জীবন যাপনের কায়দা বারবার মুগ্ধ করেছে অনুরাগীদের।
অরিজিতের সম্পত্তির পরিমাণ কিন্তু অনায়াসেই টেক্কা দিতে পারে বলিউডের তাবড় তাবড় তারকাদের। দেশ বিদেশের শো করা থেকে শুরু করে সিনেমায় প্লেব্যাক করে বছর বছর কোটি কোটি টাকা উপার্জন করেন শিল্পী। কিন্তু তিনি যেহেতু খুবই সাধারণ মানের জীবন যাপন করেন তাই সেই টাকা তিনি কিভাবে খরচ করেন তা জানার জন্য অনুরাগীদের কৌতূহল রয়েছে বরাবরই।
সূত্রের খবর অরিজিতের মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৫৫ কোটি। জানা যায় প্রত্যেকটা গান গাওয়ার জন্য অরিজিতের পারিশ্রমিক ১৫ থেকে ২৫ লাখ টাকা। এছাড়াও রয়েছে প্রচুর লাইভ শো, যার জন্য তাঁর পারিশ্রমিকের অংক থাকে মোটামুটি কোটির ওপরেই। কিন্তু শুনতে সত্যিই অবাক লাগে এত বড় মাপের একজন গায়ক হয়েও খুবই সাধারণ মানুষের মতন জীবন যাপনে অভ্যস্ত তিনি। নেই কোন দামি গাড়ি।
তবে সম্প্রতি ম্যানেজারের পরামর্শেই বাধ্য হয়ে বড় গাড়ি কিনেছেন তিনি। শুধু তাই নয় বিলাসিতার ছাপ নেই অরিজিতের দৈনন্দিন জীবনেও। এই প্রচন্ড গরমেও এসি নয় ফ্যানের হাওয়াতেই দিন কাটান তিনি। এছাড়াও মুম্বাইয়ের মত শহরে এত নাম ডাক হওয়ার পরেও নিজের ছেলেকে মুম্বাই কিংবা নিদেন পক্ষে কলকাতারও কোন বড় স্কুলে নয় তিনি পড়াচ্ছেন নিজেরই জেলার অর্থাৎ জিয়াগঞ্জেরই মাউন্ট লিটেরা জি স্কুলে।
শুধু তাই নয় আর পাঁচজন অভিভাবকদের সাথেই ছেলের জন্য স্কুলের গেটের বাইরেই অপেক্ষা করেন তিনি। এছাড়া অতি সম্প্রতি দেখা গিয়েছিল শিলিগুড়িতে শো করতে গিয়ে কোন হেলিকপ্টার বা পার্সোনাল গাড়িতে নয় অরিজিৎ গিয়েছিলেন আর পাঁচজনের মতোই ট্রেনে চেপে। কাজেই বোঝাই যাচ্ছে বরাবরই মাটির কাছাকাছি থাকতেই ভালোবাসেন অরিজিৎ।
আর নিজের উপার্জনের বিপুল পরিমাণ অর্থ তিনি বিলাসবহুল জীবনযাপনে নয় বরং খরচ করেন সমাজ সেবার কাজে। শৈশবে জিয়াগঞ্জের যে স্কুলে তিনি পড়েছিলেন সেখানেই সভাপতি দায়িত্ব নিয়েছেন অরিজিৎ। সেই স্কুলের উন্নয়নে বিশেষ উদ্যোগী হয়েছেন তিনি। সংস্কারের অভাবে দীর্ঘদিন ধরে সেই স্কুলের যে মাঠ পড়েছিল অরিজিতের তত্ত্বাবধানেই তা ঠিক করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
নিজের শো থেকে উপার্জিত অর্থ দুস্থ শিশুদের হার্টের চিকিৎসায় ব্যয় করেছেন গায়ক। এছাড়াও রয়েছে তাঁর নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। আগামী দিনে চিন্তাভাবনাও রয়েছে জিয়াগঞ্জের মতো জায়গায় উন্নত মানের হাসপাতাল করার। এছাড়াও নিজের উপার্জনের অর্থ তিনি ব্যয় করেছেন গানের স্কুল নির্মাণে। এছাড়াও দিয়াগঞ্জেই বিনামূল্যে ইংরেজি শিক্ষার কোচিংও খুলেছেন গায়ক। এইভাবে নিজের উপার্জন দিয়েই লাগাতার নানাভাবে সমাজ কল্যাণে ব্রতি হয়েছেন দেশের গর্ব অরিজিৎ সিং।