প্রায় এক দশক আগে স্টার জলসার (Star Jalsha) জনপ্রিয় মেগা সিরিয়াল ‘ভালোবাসা.কম’ (Bhalobasha.Com)-এ প্রধান নায়ক ওমের চরিত্রে অভিনয় করেই বাংলা জুড়ে তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন অভিনেতা রাজা গোস্বামী (Raja Goswami)। ব্লুজ প্রোডাকশনের এই সিরিয়ালটি ছিল রাজা গোস্বামীর জীবনের অন্যতম টার্নিং পয়েন্ট। এই সিরিয়ালের সেট থেকেই যেমন রাজা পেয়েছিলেন তাঁর জীবনের সবচেয়ে প্রিয় মানুষ মধুবনী গোস্বামীকে, তেমনি এই সিরিয়ালটি রাজাকে দিয়েছে ব্যাপক নাম-যশ-খ্যাতি সবকিছুই।
ভালোবাসা.কমে নায়িকা তোড়া চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন মধুবনী। সিরিয়ালের সেট থেকেই তাদের মধ্যে শুরু হয় প্রেম ভালোবাসা।সম্পর্কের এক দশক পেরিয়ে আজ রাজা মধুবনী এক সন্তান কেশবের বাবা-মা। এই মুহূর্তে রাজা বাংলা সিরিয়ালে চুটিয়ে অভিনয় করছেন। নায়কের চরিত্রে দেখা না গেলেও একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ সব পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করে চলেছেন তিনি। সব মিলিয়ে এখন আর কাজ নিয়ে তাকে ভাবতে হয় না। একসময়ের কঠিন লড়াই শেষে এখন তিনি ফল ভোগ করছেন।
নিজের স্বপ্নের পেশার প্রতিটা মুহূর্ত চেটেপুটে উপভোগ করছেন রাজা। তবে এই সফর সহজ ছিল না একেবারেই। একবার জনপ্রিয় ইউটিউব চ্যানেল জোশ টকসের মঞ্চে এসে রাজা বলেছিলেন ‘ক্যারিয়ারের শুরুতেই নাকি তিনি একটি বিজ্ঞাপনের কাজ করেছিলেন একজন জুনিয়র আর্টিস্ট হিসাবে। যার জন্য তিনি প্রথম পারিশ্রমিক হিসাবে পেয়েছিলেন ৩০০ টাকা।
কিন্তু বাড়িতে এসে যখন বাবা মাকে বিজ্ঞাপনে অভিনয় করার কথা জানান তখন সেই বিজ্ঞাপন দেখে প্রথমে তাকে খুঁজেই পাচ্ছিলেন না তার বাবা-মা। অন্তত ১০-১৫ বার দেখার পর তাঁরা বুঝতে পারেন রাজা ওই বিজ্ঞাপনে রয়েছেন ঠিকই তবে আউট অফ ফোকাস। সেদিন অভিনেতাকে তাঁর মা বলেছিলেন ভবিষ্যতে তিনি যেন এমন কিছু করেন যাতে তাঁকে এভাবে আর দেখতে না হয়।
রাজা জানিয়েছিলেন তাঁর ছোটবেলাটা নাকি কেটেছিল উত্তর কলকাতার ভাড়া বাড়িতে থেকে। তবে ছোট থেকেই পড়াশোনায় তুখোর ছিলেন রাজা। কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে তাঁর রেজাল্ট খারাপ হওয়ায় একসময় যে আত্মীয়-স্বজনরা পিঠ চাপড়াতো পরে তাঁদের সেই চড়টাই গালে এসে পড়েছিল। এরপরেই একসময় তিনি উপলব্ধি করেছিলেন টাকা-পয়সার থেকেও জীবনে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ পরিচয়। তাই সেসময় তার মনে যে চেপেছিল অভিনেতা হওয়ার স্বপ্ন। কিন্তু অভিনেতার পরিবারের কেউই কোনদিন এই পেশার সাথে যুক্ত ছিলেন না। এমনকি তিনি নিজেও শুধু গান টুকু গাওয়া ছাড়া কোনদিন কোন নাটক বা থিয়েটারের সাথে যুক্ত ছিলেন না।
তাই প্রথমবার তিনি যখন অভিনেতা হওয়ার ইচ্ছার কথা জানিয়েছিলেন প্রথমে কারোর বিশ্বাস হয়নি। সেই পুরনো কথা বলতে গিয়েই দিন রাজা জানান তিনি তাঁর মাকে প্রথমে বলেছিলেন তিনি মডেলিং করবেন। কিন্তু সে কথা তার বাবার কানে পৌঁছাতেই তিনি জানতে চেয়েছিলেন এই মডেলিং আসলে কি? সহজে বোঝাতে রাজা বলেছিলেন র্যাম্পে হাঁটার কথা। এ কথা শুনে সে সময় রাজার বাবা রসিকতা করে বলেছিলেন ‘এত বড় ছেলেকে এখন টাকা দিয়ে হাঁটা শেখাতে হবে?
রাজা জানান মুম্বাই গিয়ে বেশ কিছুদিন স্ট্রাগল করার পর কলকাতায় পূজোর ছুটিতে এসেই রাজা সুযোগ পেয়েছিলেন ‘চ্যাম্পিয়ন’ নামের একটি সিরিয়ালের ছোটখাটো একটি চরিত্রে। এরপরেই তাঁর কাছে সুযোগ আসে ‘ভালোবাসা.কমে অভিনয় করার। আর তারপর বাকিটা তো ইতিহাস। রাজা জানিয়েছেন এই ভালোবাসা ডটকমের সুযোগ পাবার ক্ষেত্রে তার কাছে ভাগ্য অনেকটা সহায় হয়েছিল। তাই যারা স্বপ্ন দেখেন তাদেরকে অনুপ্রেরণা যুগিয়ে রাজা বলেছেন স্বপ্ন দেখা কখনোই বন্ধ করা উচিত নয়,সময় লাগলেও একদিন না একদিন স্বপ্ন পূরণ হবেই।