বাংলা সিনেমার (Bengali Cinema) জনপ্রিয় খলনায়িকা (Villain) হলেন বর্ষীয়ান অভিনেত্রী অনামিকা সাহা (Anamika Saha)। একটা সময় খলনায়িকা হয়েই দাপিয়ে কাজ করেছিলেন তিনি। পরপর নেগেটিভ চরিত্র (Negative Role) করে টাইপকাস্ট (Typecast) হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু মেয়ের কষ্ট দেখে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন খল চরিত্র আর করবেন না তিনি। যদিও তা সম্ভব হয়নি। তাই বাংলা সিনেমা-প্রেমীদের কাছে তিনি আজও ‘বিন্দুমাসি’ (Bindumasi) হয়েই থেকে গিয়েছেন।
জনপ্রিয় পরিচালক হরনাথ চক্রবর্তী সুপারহিট সিনেমা ‘ঘাতক’। এই সিনেমায় বিন্দুমাসির মতো একটি নেগেটিভ চরিত্র করেই তুমুল জওনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন অভিনেত্রী। সেই জনপ্রিয়তায় ভাঁটা পড়েনি আজও। অভিনেত্রীর কথায় ‘এই যে আজও আমি করে খাচ্ছি, গ্রামেগঞ্জে আজও যে আমি গেলে এত মাতামাতি, তা ব্যস, ওই ছবির জন্যেই। ছবির নাম ‘ঘাতক’। আর আমি ‘বিন্দুমাসি’। আমার নামই হয়ে গেল ওইটা’।
সম্প্রতি টিভি নাইন বাংলার সাথে এক একান্ত সাক্ষাৎকারে বসেছিলেন অভিনেত্রী। সেখানেই তিনি জানান কিভাবে মাত্র ১৭ বছর বয়স থেকেই তাঁর অভিনয়ের যাত্রা শুরু হয়েছিল। এতদিনের অভিনয় জীবনে ইন্ডাস্ট্রিতে খলনায়িকা হয়েই থেকে গেলেও অভিনেত্রীর শুরুটা হয়েছিল তরুণ মজুমদারের ‘সংসার সীমান্তে’ দিয়ে। সেসময় শিশুশিল্পী হিসাবেই অভিনয় শুরু করেছিলেন তিনি। কিন্তু পরবর্তীতে একটি ছবিতে তাঁকে করে হয়েছিল ঝুমুর দলের হেড।
সেই চরিত্র কলার পর তাঁর কাছে আসতে শুরু বাংলা সিনেমার বাইজিদের চরিত্র। অর্থাৎ তখনকার দিনে আইটেম গার্ল। অভিনেত্রীর কথায় সেসময় তাঁর সাথে তুলনা চলত ‘সেক্সি গার্ল’ রেহানা সুলতানার। তখনকার অনামিকা সাহারও নাকি ছিল চাবুক ফিগার। এরপরেই একটি সিনেমার পোস্টার করা হয়েছিল শুধু তাঁর দুটো পা নিয়ে। যা দেখে নাকি অভিনেত্রীর স্বামীকে অভিনেতা বিপ্লব চ্যাটার্জী বলেছিলেন ‘এ রাম, তুই আর মেয়ে পেলি না, পা দেখিয়ে কলকাতা নাচাচ্ছে। এ কে বিয়ে করলি?’
যদিও একথা নাকি বিপ্লব চ্যাটার্জী নাকি মজা করেই বলেছিলেন বলে জানান অভিনেত্রী। তবে বিয়ের পর শশুড়বাড়ির আপত্তিতে অভিনয় ছেড়েছিলেন তিনি। অভিনেত্রীর কথায় ‘শাশুড়ি তো আমায় একদম পছন্দ করত না। আমায় দেখেই ভেউভেউ করে কান্না শুরু করে দিয়েছিলেন’। শশুরমশাইয়ের ইচ্ছায় রেডিওতে ডাবিং করে হয়ে উঠেছিলেন ‘ডাবিনেত্রী’। এর পাঁচবছর পর বাংলাদেশের লোকদের জোরাজুরিতে শশুড়মশাইয়ের সম্মতি নিয়েই তিনি অভিনয় করেছিলেন ‘বেদের মেয়ে জোৎস্না’ সিনেমায়। তবে দিদার চরিত্রে। যদিও তা নিয়ে আফসোস নেই অভিনেত্রীর। এপ্রসঙ্গে তাঁর সংযোজন ‘তাতে কী হয়েছে? আমি তো ২৯ বছর বয়সে বুম্বার মা করেছি’।
এরপর টানা বেশ কিছুদিন নেগেটিভ চরিত্র করেছেন তিনি। কিন্তু তাঁর মেয়েকে সবাই বলতে শুরু করে, ‘তোর মা কেমন দুষ্টু-দুষ্টু রোল করে’। তাই মেয়ের কষ্ট শুনে নেগেটিভ চরিত্র করা চে দিয়েছিলেন তিনি। তবে এখন আর তেমনভাবে সুযোগ পান না খলনায়িকার চরিত্রে। এপ্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে নতুনদের ওপর খানিক ক্ষোভ প্রকাশ করে অভিনেত্রীর বিস্ফোরক অভিযোগ ‘এখন তো সব ২২ বছরের বাচ্চা মেয়েরা খলনায়িকা। আমাদের তো শিখতে হয়েছে। কীরকম চাহনি হবে, কীভাবে কথা বলব এগুলো শিখতে হয়েছে। ওরা তো করতেই পারে না। না শিখে করলে যা হয়, জায়গা করে নিতে পারছে না’।