আর মাত্র একদিনের অপেক্ষা, এরপরই সরস্বতী পুজো (Saraswati Puja 2023)। প্রত্যেক বছর এই দিনটির জন্য মুখিয়ে থাকেন বিদ্যার্থীরা। আর এই পুজোর সঙ্গেই যে ফলের নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত সেটি হল কুল। ছোট্ট দেখতে এই ফলটি পুজোর সময় দেবীকে উৎসর্গ করা হয়। তবে এই কুল (Jujube fruits) এবং সরস্বতী পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে আরও একটি কাহিনী। অনেকসময়ই বড়দের বলতে শোনা যায়, সরস্বতী পুজোর আগে কুল খেলে রুষ্ট হন দেবী। এমনকি পরীক্ষায় ফেল পর্যন্ত করে যেতে পারে বিদ্যার্থীরা!
পৌষ মাসের মাঝামাঝি নাগাদ থেকেই বাজারে কুল পাওয়া যায়। কিন্তু শত ইচ্ছা থাকলেও বেশিরভাগ বিদ্যার্থীই সেই সময় সাহস করে কুল খান না। যতই হোক এই ফলটি খাওয়া না খাওয়ার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে পরীক্ষায় পাশ-ফেলের কথা! অন্তত বড়রা তো তেমনটাই বলেন। তবে সত্যিই কি এমনটা হয়? চলুন জেনে নেওয়া যাক এই লোকাচারের নেপথ্যের আসল কারণ।
টক-মিষ্টি কুল প্রায় প্রত্যেক মানুষই খেতে ভালোবাসেন। আর সত্যি সত্যিই দেবী সরস্বতীর সঙ্গে এই ফলের নিবিড় সম্পর্কও রয়েছে। সেই জন্য পুজোর সময় দেবীর দোয়াতের ওপরও একটি নারকেল কুল রেখে দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। সকাল থেকে উপোস করে অঞ্জলি দেওয়ার পরই প্রসাদে কুল খান বিদ্যার্থীরা।
শাস্ত্র অনুযায়ী, দেবী সরস্বতীকে তুষ্ট করার জন্য দীর্ঘ তপস্যা করেছিলেন ব্যাসদেব। শোনা যায়, তপস্যার আগে দেবী তপস্যাস্থলের পাশে একটি কুলের বীজ রেখে শর্ত দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, যতদিন না এই বীজ থেকে গাছ হবে এবং সেই গাছের ফল ব্যাসদেবের মাথায় পড়বে ততদিন অবধি দেবীর তপস্যা করে যেতে হবে। এরপর এক পঞ্চমীর দিন ব্যাসদেবের মাথায় নতুন গাছের ফল পড়েছিল। তখন তিনি বুঝতে পারেন দেবী সরস্বতী তুষ্ট হয়েছেন। তাই সেদিনই দেবীকে কুল নিবেদন করে তিনি ব্রহ্মসূত্র রচনা শুরু করেন। এই কারণেই শ্রী পঞ্চমীর দিন দেবীকে কুল নিবেদন করে তা খাওয়ার নিয়ম রয়েছে।
অবশ্য শুধুমাত্র এই একটি কারণই নয়, সরস্বতী পুজোর আগে কুল না খাওয়ার পিছনে রয়েছে আরও বেশ কয়েকটি প্রচলিত রীতি। আসলে পশ্চিমবঙ্গ কৃষি প্রধান রাজ্য। আর হিন্দু ধর্মে মরসুমের প্রথম ফল দেবতাকে উৎসর্গ করে খাওয়ার একটি নিয়ম রয়েছে। পৌষ-মাঘ মাস নাগাদ বাজারে ভালো কুল পাওয়া যায়। আর যেহেতু মাঘ মাসেই সরস্বতী পুজো হয়। সেই জন্য বসন্ত পঞ্চমীর দিন তা দেবীকে উৎসর্গ করে প্রসাদ হিসেবে খাওয়ার নিয়ম রয়েছে।
এছাড়াও বসন্তকালে চারিদিকে বিভিন্ন রকমের রোগও দেখা যায়। ঘরে ঘরে জ্বর-সর্দি-কাশি-পেটের সমস্যা দেখা যায়। এই সময় আধ পাকা কিংবা কাঁচা কুল খেলে পেটের সমস্যা দেখা দিয়ে পারে। এছাড়াও এই ফল যেহেতু প্রচণ্ড টক হয় তাই দাঁতের সমস্যাও হতে পারে। তাই এই সময় এটি খেতে বারণ করা হয়। তাছাড়া শাস্ত্রেও বলা হয়েছে, মাঘ মা কুল কিংবা মুলো না খাওয়ার কথা। সেই কারণেও এই সময়ে কুল খেতে নেই।
কিন্তু যে কোনও শাস্ত্রের নিয়ম কিংবা লোকাচার ছোটরা বোঝে না। সেই কারণে বড়রা ভয় দেখান যে সরস্বতী পুজোর আগে কুল খেলে দেবী রাগ করবেন এবং ফলস্বরূপ পরীক্ষায় ফেলও করিয়ে দিতে পারেন। সেই জন্যই প্রত্যেক বিদ্যার্থী পুজো হওয়া অবধি অধীরভাবে অপেক্ষা করেন এবং দেবীকে কুল উৎসর্গ করার পরই তা খেয়ে থাকেন।