নায়িকা মানেই হবে দেখতে সুন্দর ছিপ ছিপে মেদহীন ফিগার। এই এক বদ্ধমূল ধারণা বহুদিন ধরেই প্রচলিত রয়েছে বাংলা থেকে হিন্দি সমস্ত বিনোদন মাধ্যমেই। কিন্তু অনেকেই রয়েছেন যারা বরাবরই হাঁটেন স্রোতের বিপরীতে। তথাকথিত সুন্দরী এবং তন্বী ফিগার না হলেও শুধুমাত্র নিজের সাবলীল অভিনয় দক্ষতাতেই জায়গা করে নেন ইন্ডাস্ট্রিতে। বাংলা ইন্ডাস্ট্রির এমনই একজন ছক ভাঙা অভিনেত্রী হলেন সংঘশ্রী সিনহা মিত্র (Sanghasri Sinha Mitra)।
ছোট পর্দার পাশাপাশি বড় পর্দাতেও চুটিয়ে অভিনয় করছেন তিনি। এই মুহূর্তে তাঁকে দেখা যাচ্ছে স্টার জলসার জনপ্রিয় সিরিয়াল ‘নবাব নন্দিনী’-তে। এই সিরিয়ালের নায়িকা নন্দিনীর দজ্জাল কাকিমা গীতার চরিত্রে অভিনয় করছেন তিনি। সিরিয়ালে খলনায়িকা (Villain) চরিত্রে অভিনয় করেও দুর্দান্ত প্রশংসা পেয়েছেন সংঘশ্রী। কিছুদিন আগেই টলিউড অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখার্জির সাথে সংঘশ্রী অভিনয় করেছেন ‘শ্রীমতি’ সিনেমায়। এছাড়াও তাকে দেখা গিয়েছে আবির চট্টোপাধ্যায় এবং ঋতাভরী চক্রবর্তী অভিনীত সিনেমা ‘ফাটাফাটি’-তেও।
সবমিলিয়ে গোলগাল চেহারা নিয়েই ফাটিয়ে কাজ করছেন অভিনেত্রী। কিন্তু তার মানে এই নয় যে চেহারা নিয়ে তাঁকে কখনো কোন বাঁকা মন্তব্য শুনতে হয়নি। বডি শেমিংয়ের (Body Shaming) জন্য একসময় বাদ পড়েছেন একাধিক সিনেমা থেকে। এপ্রসঙ্গে একবার এক সাক্ষাৎকারে অভিনেত্রী জানিয়েছিলেন, ‘আমার বয়সী এমনকি আমার থেকে বড় অনেকেই নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করেন কেবলমাত্র তারা তন্বী বলে। মোটাদের এখনও নায়িকা হিসেবে মেনে নেওয়া হয় না। মোটারা যেন শুধুই কমেডি করবে’। আদতে মালদার বাসিন্দা, সংঘশ্রী অভিনয়ে আসার শুরু থেকেই পড়েছিলেন নানান কঠিন প্রশ্নের মুখে।
শুনতে হয়েছিল সঠিক চেহারার না হলে কি ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানো যায়? শিকার হয়েছিলেন বডি শেমিংয়ের। প্রসঙ্গত অনেকদিন আগেই পিতৃহারা হয়েছিলেন অভিনেত্রী। সেই সময় অভিনেত্রীর মায়ের ব্যবসাও নাকি ভালো চলছিল না। তাই সংসারের দায়িত্ব উঠেছিল সংঘশ্রীর কাঁধে। তাই একদিকে যেমন ছিল টাকা রোজগারের চিন্তা, সেইসাথে অভিনেত্রীর গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছিল অভিনেত্রী দীর্ঘদিনের প্রেমিক।
সম্প্রতি এ প্রসঙ্গে আনন্দবাজার অনলাইনে মুখ খুলে ছিলেন অভিনেত্রী। ১১ বছরের সম্পর্ক ভাঙতে কষ্ট হলেও দুবার ভাবেননি তিনি। অভিনেত্রীর কথায় ‘আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি কেউ যদি আপনাকে অপমান করে তা হলে তা সহ্য করবেন না। কেউ যদি আপনার গায়ে হাত তোলে তা এড়িয়ে যাবেন না। ভাববেন না যে এটা তাঁর ভুল। এগুলো অভ্যাস। যা কোনও দিন পরিবর্তন হবে না। ১১ বছরের সম্পর্কে আমায় শুনতে হয়েছিল, ‘তুই মোটা, তোকে কে অভিনয়ে সুযোগ দেবে’। চূড়ান্ত মারধর করত, তার পর আর সহ্য করতে পারিনি। ভেঙে দিই সেই সম্পর্ক।’
তাই ব্রেকআপ এর পরেই রাগের চোটে অভিনেত্রী বাড়িতে জানিয়ে দিয়েছিলেন যাকে পাবেন তাকেই বিয়ে করবেন বটগাছ হলেও চলবে। এরপরেই ম্যাট্রিমনি সাইটে বিজ্ঞাপন দিয়েই মায়ের পছন্দ করা পাত্র রোহান মিত্রের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন অভিনেত্রী। বিয়ের পরে এখন চুটিয়ে সংসার করছেন তিনি। আর এখন সংঘশ্রীর অভিনেত্রী হওয়ার লড়াইয়ে তার সর্বক্ষণের সঙ্গী তাঁর স্বামী।