দু’সপ্তাহ হয়ে গেল টলিউডের নামী অভিনেত্রী (Tollywood actress) ঐন্দ্রিলা শর্মা (Aindrila Sharma) প্রয়াত হয়েছেন। কিন্তু তাঁর পরিবার ও প্রিয়জনদের কাছে এখনও তাঁকে হারানোর স্মৃতি টাটকা। তবে এবার অভিনেত্রীর মৃত্যু সংক্রান্ত একাধিক চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আনলেন তাঁর মা। ঐন্দ্রিলা যে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন সেখানকারই একজন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ এনেছেন অভিনেত্রীর মা (Aindrila Sharma mother) শিখা শর্মা।
শিখাদেবী (Shikha Sharma) একটি নামী সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আলাপচারিতার সময় বলেন, টানা ২০ দিন হাসপাতালে ছিলেন তাঁরা। ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার পর অভিনেত্রীকে যখন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তখন তাঁর অপারেশন করা হয়েছিল। খুব জটিল অপারেশন হলেও সেটি সফল হয়েছিল। কিন্তু অপারেশনের পরের ট্রিটমেন্ট অর্থাৎ পোস্ট অপারেটিভ ট্রিটমেন্ট খুব খারাপ ছিল।
ঐন্দ্রিলার চিকিৎসা করছিলেন যে চিকিৎসকেরা তাঁদের মধ্যে একজনের বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন শিখাদেবী। হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট ইউনিটের ইনচার্জ পিয়া ঘোষের নামে তিনি এনেছেন একাধিক অভিযোগ। ঐন্দ্রিলার মায়ের বক্তব্য, ‘আমি জানি না উনি মানুষ কিনা। তবে এটুকু বলতে পারি উনি দায়িত্ব নিয়ে আমার মেয়েকে মৃত্যুর পথে পাঠিয়ে দিলেন’।
‘জিয়ন কাঠি’ অভিনেত্রীর মা জানান, তাঁরা মেয়েটাকে সুস্থ করে তোলার জন্য চিকিৎসকদের পায়ে পড়েছেন। সেই জন্য বাইরে থেকে চিকিৎসক আনার অনুরোধও করেছিলেন। বাকি চিকিৎসকেরা সহায়তা করেছিলেন। তাঁরা এসেছিলেন। তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করা যেত। কিন্তু সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক সেই বিষয়টিতে ‘ইগো’ দেখান। শিখাদেবীর প্রশ্ন, ‘একটা ২৪ বছরের মেয়েকে বাঁচানোর ক্ষেত্রে ইগো বড় হতে পারে?’
অভিনেত্রীর মা জানিয়েছেন, অনেকবার এমন হয়েছে অন্যান্য চিকিৎসকেরা একটি ওষুধ কিইংবা ইঞ্জেকশন দেওয়ার কথা বলেছেন। কিন্তু উনি সেটি করেননি। সকালে দিতে বলা হলে সেই ওষুধ রাতে দিতেন। এমনকি অন্যান্য চিকিৎসকের বললেও উনি শুনতেন না। আর উনি যেহেতু ইউনিট হেড ছিলেন তাই ওনার কথা শুনতেই হতো। শিখাদেবী জানিয়েছেন, ঐন্দ্রিলা যে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন সেখানকার বাকি চিকিৎসক, নার্সিং স্টাফ প্রত্যেকে খুব মানবিক এবং দক্ষ ছিলেন। কিন্তু ইউনিট হেডের ইগো ছিল!
শুধু এটুকুই নয়, শিখাদেবীর অভিযোগ ডাঃ পিয়া ঘোষ নাকি শুরু থেকেই প্রচণ্ড নেতিবাচক আচরণ করেন। বারবার তাঁদের বলেছিলেন ঐন্দ্রিলা বাঁচবে না। এমনকি বাইরের জুতো পরে ঐন্দ্রিলার ঘরে চলে যেতেন। অ্যাপ্রন পরতেন না। শুধু হাত স্যানিটাইজ করতেন। যদিও পেশান্টকে খুব একটা ছুঁতেন মা তিনি। শিখাদেবীর সংযোজন, ‘৩৫ বছর ধরে ওঁর বাবা চিকিৎসা পেশার সঙ্গে যুক্ত, ওঁর দিদি ডাক্তার, আমি নার্সিং প্রফেশনে রয়েছি। রোগীদের বিষয়ে অল্প জ্ঞান তো রয়েছে। কিন্তু এমন আচরণ করতেন যেন আমরা কিছু জানি না’।
শিখাদেবী জানান, ঐন্দ্রিলার হার্ট, কিভার, কিডনি সব ভালো ছিল। সমস্যা ছিল শুধু ব্রেনে। তবে জটিল অপারেশন সফল হয়েছিল। এমআরআই রিপোর্ট ভালো ছিল। ওঁর বাঁচার আশা ছিল। কিন্তু অপারেশনের পর এত অবহেলার জন্যই এই পরিণতি হল। ঐন্দ্রিলার মা জানান, তাঁরা মুম্বই, কেরালার ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। তাঁরা বলেছিলেন অভিনেত্রীকে নিয়ে যাওয়ার কথা। ‘জিয়ন কাঠি’ অভিনেত্রী একটু ঠিক হলেই তাঁরা নিয়েও যেতেন। কিন্তু তার আগেই সব শেষ হয়ে গেল।
সবশেষে শিখাদেবীর সংযোজন, চোখের সামনে দেখেছেন অপারেশনের পর ঐন্দ্রিলার কতখানি অবহেলা করা হয়েছে। কিন্তু তাও কিছু করতে পারেননি। অভিনেত্রীর মা বলেন, ‘জ্বর-সর্দির চিকিৎসা করতে পারেন উনি, তবে জটিল রোগী দেখার যোগ্য নন। এমনই যদি চলতে থাকে তাহলে আরও প্রচুর ঐন্দ্রিলাকে দায়িত্ব নিয়ে মেরে ফেলবেন উনি’।