যেমন সুন্দরী দেখতে, তেমন অভিনয়, সেই সঙ্গেই নাচে পারদর্শী। নায়িকা হওয়ার জন্য ঠিক যে যে গুণগুলি প্রয়োজন সবই ছিল ঐন্দ্রিলা শর্মার (Aindrila Sharma) মধ্যে। কিন্তু ভাগ্যের এতটাই নিষ্ঠুর পরিহাস যে এত প্রতিভার অধিকারিণী হওয়া সত্ত্বেও কোনোদিন যোগ্য মর্যাদা পেলেন না তিনি। আজ ঐন্দ্রিলার প্রয়াণের পর তাঁকে নিয়ে এত চর্চা হচ্ছে, সোশ্যাল মিডিয়া খুললেই চোখে পড়বে তাঁকে নিয়ে বানানো ছবি, ভিডিও- কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সবটাই তাঁর অসুস্থতার জন্য। হয়তো কাজ নিয়ে হলে অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা অনেক বেশি শান্তি পেতেন।
বহরমপুরের এই মিষ্টি মেয়ের ছোট থেকেই ইচ্ছা ছিল অভিনেত্রী হওয়ার। তবে তাই বলে পড়াশোনায় কোনোদিন খামতি রাখেনি সে। পড়াশোনার পাশাপাশিই চালিয়েছিলেন নাচ এবং আবৃত্তি। তবে ক্যান্সারের জন্য যখন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ায় বাধা এল, তখন সুস্থ হওয়ার পর ঐন্দ্রিলা ঠিক করেছিলেন ছোটবেলার ইচ্ছাকে বাস্তবায়িত করবেন।
২০১৭ সালে ‘ঝুমুর’ ধারাবাহিকের হাত ধরে বিনোদন ইন্ডাস্ট্রিতে পা রাখেন ঐন্দ্রিলা। এই ধারাবাহিকে তাঁর সহ অভিনেতা ছিলেন সব্যসাচী চৌধুরী। ধারাবাহিকটি খুব বেশি হিট করেনি। এরপর ‘জিয়ন কাঠি’ ধারাবাহিকে কাজের সুযোগ পান অভিনেত্রী। এই সিরিয়ালের হাত ধরেই জনপ্রিয়তা পাওয়া শুরু তাঁর। ধারাবাহিকটি টিআরপি তালিকায় কোনও সময়ই ওপরের দিকে জায়গা না পেলেও, বছর দুয়েক চলেছিল।
অবশ্য শুধুমাত্র সিরিয়ালই নয়, বেশ কিছু ছবিতেও কাজ করেছেন ঐন্দ্রিলা। আদৃত রায়ের সঙ্গে ‘আমি দিদি নম্বর ১’ এবং হৃতজিৎ চ্যাটার্জির সঙ্গে ‘লাভ ক্যাফে’ নামে একটি ছবিতে দেখা গিয়েছিল অভিনেত্রীকে। চলতি বছর টেলিভিশনের পর্দায় ‘দেবী দশমহাবিদ্যা’য় ‘দেবী মাতঙ্গী’র চরিত্রে দেখা গিয়েছিল এই সুন্দরী অভিনেত্রীকে। চরিত্রটি খুব বড় না হলেও, নিজের নাচের দক্ষতার মাধ্যমে দর্শকদের নজর কেড়েছিলেন ঐন্দ্রিলা। এছাড়াও ‘ভাগাড়’ নামের একটি ওয়েব সিরিজেও অভিনয় করেছিলেন তিনি।
ঐন্দ্রিলার এমন একজন মেয়ে যিনি দু’বার ক্যান্সারকে পরাজিত করেছেন। প্রথমবার কর্কট রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে জয়ী হওয়ার পর বিনোদন দুনিয়ায় পা রাখেন তিনি। ক্যান্সারের কড়া ডোজের ওষুধ খেয়েই রাত জেগে ধারাবাহিকের কাজ করেছেন। সুন্দরী দেখতে, দারুণ অভিনয়, নাচে দক্ষ এবং সর্বোপরি পরিশ্রমী এই মেয়ে বিনোদন দুনিয়াকে সবটুকু দিলেও সেই মাপের বড় ছবি কিংবাআ চরিত্র পাননি। টলিউডের যে কোনও বড় পরিচালকের ছবির নায়িকা হওয়ার যোগ্যতা থাকলেও তিনি সুযোগ পাননি।
আজ ঐন্দ্রিলা চলে যাওয়ার পর তাঁর জন্য চোখের জল ফেলছেন টলিউডের নামী অভিনেতা-অভিনেত্রী-পরিচালকেরা। কিন্তু তিনি বেঁচে থাকলে যদি তাঁর ট্যালেন্টের কদর করে ভালো কাজের অফার দেওয়া হতো তাহলে হয়তো আজ স্রেফ তাঁর অসুস্থতার জন্য নয়, কাজের জন্যেও তাঁকে চিনতে পারতেন অনেকে। মৃত্যুর পর ঐন্দ্রিলা শুধুই ‘ফাইটার’ হিসেবে নয় বরং ইন্ডাস্ট্রির একজন নামী অভিনেত্রী হিসেবে পরিচিতি পেতেন। আজ চলে যাওয়ার পর ঐন্দ্রিলাকে যে সম্মান দেওয়া হচ্ছে, সেটা যদি জীবিত অবস্থায় পেতেন তাহলে হয়তো অভিনেত্রীর প্রয়াণের পরেও দর্শকদের জন্য থেকে যেত আরও বহু স্মরণীয় কাজ।