সত্যিকারের প্রেম হয়তো এমনটাই হয়। অপূর্ণতাতেই পূর্ণ হয় সে। ঠিক যেমন হয়েছিল রোমিও-জুলিয়েটের সঙ্গে। ঠিক যেমনটা হল ঐন্দ্রিলা শর্মা-সব্যসাচী চৌধুরীর সঙ্গে। শেষ পর্যন্ত মাঝপথেই ঐন্দ্রিলাকে (Aindrila Sharma) সব্যসাচীর (Sabyasachi Chowdhury) হাত ছাড়তে হলেও, কোটি কোটি অনুরাগীর মনে কিন্তু চিরকাল বেঁচে থাকবে এই তারকা জুটির রূপকথার মতো প্রেমকাহিনী।
মৃত্যুর কাছে হয়তো হার মেনেছেন ঐন্দ্রিলা। কিন্তু নিজের ২৪ বছর বয়সে অনেক কিছু জিতেও নিয়েছেন তিনি। পরিবার, অনুরাগীরা তো রয়েছেই, সেই সঙ্গেই ‘জিয়ন কাঠি’ অভিনেত্রী চিরকালের মতো জিতে নিয়েছেন সব্যসাচীর ভালোবাসাও। সঙ্গে না থাকলেও, সব্যসাচীর মনের বিশেষ স্থানে যে ঐন্দ্রিলা চিরকাল থাকবেন তা আর আলাদা করে বলার অপেক্ষা রাখে না।
গত কয়েকদিন ধরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ঐন্দ্রিলা-সব্যসাচীর একটি পুরনো র্যাপিড ফায়ারের ভিডিও বেশ ঘোরাফেরা করছে। সেখানে অভিনেতাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, ঐন্দ্রিলা নামটি শুনলেই তাঁর প্রথম কোন কথা মাথায় আসে? জবাবে হাসিমুখে তিনি বলেছিলেন, ‘আমার’। অভিনেত্রীও বহুবার জানিয়েছেন, ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াইয়ে বহু শারীরিক কষ্টের সম্মুখীন হতে হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু কোনও মানসিক যন্ত্রণা কাছে ঘেঁষতে দেয়নি সব্যসাচী।
ঐন্দ্রিলা-সব্যসাচীর খাঁটি প্রেম দেখে নেটিজেনরা অনায়াসেই তাঁদের ‘বাস্তবের রোমিও-জুলিয়েট’ আখ্যাও দিয়ে দিয়েছে। জানিয়ে রাখি, টলিপাড়ার এই জনপ্রিয় তারকা জুটির প্রথম আলাপ ২০১৭ সালে। ‘ঝুমুর’ ধারাবাহিকের সেটে প্রথম আলাপ দু’জনের।
যদিও প্রথম দেখেই সব্যসাচীকে মন দিয়ে দেননি ঐন্দ্রিলা। বরং সময় নিয়ে তাঁকে ভালো করে পরখ করে নিয়েছিলেন তিনি। শ্যুটিং থেকে ছুটি পেলেই বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে আড্ডা দিতেন ঐন্দ্রিলা। সেখানে থাকতেন সব্যসাচীও। এরপর ধীরে ধীরে ফোনে কথা শুরু। কখন যে ফোনে কথা বলতে বলতেই প্রেম শুরু হয়ে গিয়েছিল তা বুঝতে পারেননি কেউই।
এরপরই ধীরে ধীরে ঐন্দ্রিলা-সব্যসাচীর জীবনে নেমে আসতে থাকে একের পর এক ধাক্কা। কিন্তু কখনও অভিনেত্রীকে একা ফেলে যাননি পর্দার ‘সাধক বামাক্ষ্যাপা’। ২০২১ সালে যখন ঐন্দ্রিলার ফুসফুসে ১৭ সেন্টিমিটারের একটি টিউমার ধরা পড়েছিল, তখনও চিকিৎসকেরা হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু মা তারা বড়মার ওপর ভরসা ছিল সব্যসাচীর। প্রথম প্রথম চিকিৎসা না করাতে চাইলেও, পরিবার এবং সব্যসাচীর কথায় দ্বিতীয়বার কর্কট রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামেন ঐন্দ্রিলা এবং জয়ী হয়েও ফিরে আসেন।
‘জিয়ন কাঠি’ অভিনেত্রীর প্রোফাইল খুললেই দেখা যাবে তাঁর শেষ ছবি সব্যসাচীর সঙ্গে। গত ৩১ অক্টোবর শেয়ার করা সেই ছবির ক্যাপশনে লেখা, ‘আমার বেঁচে থাকার কারণ’। ঠিক একদিন পরেই ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন অভিনেত্রী। কিন্তু এবারও হার মানেননি সব্যসাচী। চিকিৎসকেরা জবাব দিয়ে দিলেও অভিনেতা জোর গলায় লিখেছিলেন, ‘নিজের হাতে করে ওঁকে নিয়ে এসেছি। নিজের হাতে করেই ওঁকে ফিরিয়ে নিয়ে যাব’। গত ১৯ দিন ধরে হাসপাতালে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন সব্যসাচী। একটা মিরাক্যালের প্রার্থনা করছিলেন অভিনেতা। কিন্তু এবার আর সেটা হল না। নিজের হাতে করেই ঐন্দ্রিলাকে ফিরিয়ে নিয়ে গেলেন বটে, কিন্তু তখন অভিনেত্রী চিরঘুমে শায়িত।