গানের দুনিয়ার এক কিংবদন্তি চরিত্র হলেন মান্না দে (Manna Dey)। তিনি যে কত সুপারহিট গান গেয়েছেন তা গুনে শেষ করা যাবে না। কিন্তু সেই কিংবদন্তি শিল্পীর জীবনেরই শেষ দিকটা এমনভাবে কেটেছে যা হয়তো অনেকেই জানেন না। মান্না দে’র মতো নামী গায়কের যে এমন করুণ পরিণতি হতে পারে তা হয়তো অনেকেই ভাবতে পারবেন না।
একটি নামী সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে কিংবদন্তি শিল্পীর জীবনের এই অজানা কাহিনী সকলের সামনে এসেছে। শোনা যায়, মুম্বই ছেড়ে চলে যাওয়ার আগে মান্না দে জানিয়েছিলেন ছোট মেয়ে সুমিতা বেঙ্গালুরুতে কিছু কাজ করতে চান বলে তিনিও সেখানে চলে যাচ্ছেন। এরপর থেকে তাঁর সঙ্গে অনেক চেষ্টা করেও যোগাযোগ করতে পারেননি আর এক নামী গায়িকা আরতি মুখোপাধ্যায়। জানা যায়, ফোন বেজে গেলেও ধরতেন না কেউ।
জানা যায়, একবার জনপ্রিয় একজন ব্যক্তি মান্না দে’র জন্মদিনে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু অবস্থা এমনই ছিল যে বাড়িতে ঢুকতে পারেননি তিনি। যে মান্না দে ভোরবেলা উঠে নিয়মিত রেওয়াজ করতেন, শেষ জীবনে তিনিই পাননি একটি হারমোনিয়াম।
মান্না দে’র বহু গানের মিউজিক অ্যারেঞ্জার হিসেবে কাজ করেছিলেন শান্তনু বসু। জানা গিয়েছে, স্ত্রী সুলোচনার মৃত্যু পর একবার তিনি শান্তনুকে ফোন করেছিলেন। জানিয়েছিলেন, প্রিয় ‘সুলু’কে কয়েকটা গান উৎসর্গ করে কয়েকটি গান তৈরি করতে চান। কিন্তু তখন হয়তো কেউ খরচ করে তাঁর গান বানাতে চাইবেন না। তাই আগে থেকেই জানতে চেয়েছিলেন, ৮টি গান তৈরি করতে কত টাকা খরচ পড়বে।
যদিও শেষে নাকি মহুয়া লাহিড়ী এগিয়ে এসেছিলেন রেকর্ড করার জন্য। এই গানের রেকর্ডের জন্যই শান্তনু বেঙ্গালুরুতে পৌঁছে মান্নাবাবুকে ফোন করেছিলেন। পরের দিন গানের বিষয়ে কথা বলতে কখন যাবেন তা জানার জন্যই ফোন করেছিলেন তিনি। একটু ইতস্তত করে কিংবদন্তি গায়ক জানান, এখন ছোট মেয়ে কাজে বেরিয়ে যাবেন তাই পরের দিন আসতে।
একথা শোনার পর শান্তনু বলেছিলেন, আর কাউকে লাগবে না। যা শুনেই মান্না দে বলেন, কিছু অসুবিধা আছে। কিছুক্ষণ চুপ থেকে গায়ক নিজেই বলেন, মেয়ে তাঁকে তালা বন্ধ করে কাজে চলে যান। যা শুনে চমকে উঠে শান্তনু বলেন, ‘দাদা এভাবে?’ আর তা শুনে আক্ষেপ করে গায়ক বলেন, জীবনটা একেবারে শেষ হয়ে গেল। তাঁর মধ্যে বাঁচার আর কোনও ইচ্ছেই নেই। আর একথা বলেই হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন তিনি।
যদিও পরবর্তীকালে মান্নাবাবুর মেয়ে এই বিষয়ে কথা বলেছিলেন। বলেছিলেন, তিনি এবং তাঁর স্বামী একটি ফাস্ট ফুড সেন্টার চালাতেন। যা শুরু হতো সন্ধ্যা ৬টায় এবং চলত রাত পর্যন্ত। ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরে দু’জনেই ঘুমিয়ে পড়তেন। অপরদিকে মান্নাবাবুর দিন শুরু হতো ভোর ৫টায়। গায়কের বড় মেয়ে আমেরিকায় থাকায় ছোট মেয়ের ওপরই তাঁর সমস্ত দায়িত্ব ছিল। আর তখনই হয়েছিল এমন পরিণতি। প্রিয় শিল্পীর শেষ জীবনে এমন করুণ দশা শুনে কষ্ট পেয়েছেন তাঁর অগণিত অনুরাগীরা।