সোশ্যাল মিডিয়ার সৌজন্যে মাত্র কয়েক মিনিটের একটি ভিডিওতে সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছিল জীবন। সদ্য উচ্চ মাধ্যমিক দেওয়া পরীক্ষার্থী ‘আমব্রেলা’ বানান না বলতে পারায় তাঁকে নিয়ে শুরু হয়েছিল নানান আলোচনা। মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে যাওয়া সেই ভিডিও নিয়ে কম খিল্লি করেননি নেটিজেনদের একাংশ। রাতারাতি সুদীপ্তা (Sudipta Biswas) থেকে হয়ে গিয়েছিলেন ‘আমব্লারে গার্ল’ (Ambrella Girl)!
উচ্চ মাধ্যমিক দেওয়া একজন পরীক্ষার্থী কীভাবে ‘আমব্রেলা’ বানান ‘আমরেলা’ বলতে পারে তা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছিল নেটিজেনদের। জনৈক এক ব্যক্তি তো সম্পূর্ণ বিষয়টি নিয়ে একটি গানও বেঁধে ফেলেছিলেন। তবে তাঁকে নিয়ে খিল্লি করা সেই সকল ব্যক্তিদের এবার মুখে নয়, বরং কাজের মাধ্যমে কড়া জবাব দিলেন সুদীপ্তা। হ্যাঁ, যারা তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা, জ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করে তাঁদেরই একেবারে সপাট জবাব দিলেন তিনি।
নদিয়ার বীরনগর শিবকালী হাই স্কুলের ছাত্রী ছিলেন সুদীপ্তা বিশ্বাস। চলতি বছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল বেরনোর পর দেখা গিয়েছিল, তিনি ইংরেজিতে পাশ করতে পারেননি। এরপরই প্রকাশিত হওয়া ফলাফল অন্যায্য এই দাবি তুলে স্কুলের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন সুদীপ্তা-সহ আরও বেশ কিছু ছাত্রী। সেই সময়ই এক সাংবাদিককে সুদীপ্তা জানিয়েছিলেন, মোট ৭টি মেয়েকে ইংরেজি বিষয়ে অনুত্তীর্ণ করা হয়েছে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে লেটারও পেয়েছে তাঁরা। তাই তাঁরা ফেল করার বিষয়টি কিছুতেই মানতে পারছেন না। তাই পাশ করানোর দাবিতে শুরু করে প্রতিবাদ।
এরপরই সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক সুদীপ্তাকে ‘আমব্রেলা’ বানান জিজ্ঞেস করেন। প্রথমে প্রতিবাদ করলেও পরে তিনি বলে ওঠেন, ‘আমরেলা’। আর ব্যাস, কয়েক মিনিটের সেই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় একেবারে আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়ে। রাতারাতি বদলে যায় সুদীপ্তার জীবন।
সুদীপ্তার বাবা জানিয়েছিলেন, সে রোজ রাতে কাঁদত। এমনকি আত্মহত্যা পর্যন্ত করতে গিয়েছিল ‘আমব্রেলা গার্ল’এর তকমা পাওয়া সুদীপ্তা। তবে এখন সেই চিত্র বদলে গিয়েছে। রিভিউয়ের রেজাল্ট হাতে পাওয়ার পর দেখা গিয়েছে ইংরেজিতে সসম্মানে পাশ করেছেন সুদীপ্তা। আর তাতেই মুছে গিয়েছে সব কষ্ট।
‘আমব্রেলা’ বানানে খেই হারিয়ে ফেলা ছাত্রী ইংরেজিতে পেরেছে ৪৪। বাংলা, ইতিহাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞান এবং সংস্কৃতে পেয়েছেন যথাক্রমে ৪৯, ৫৩, ৫৭ এবং ৬৫। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করে আপাতত রানাঘাট কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে পড়ছেন সুদীপ্তা। মেয়ের সাফল্যে খুশি পরিবার। সুদীপ্তার বাবা সুকুমার বিশ্বাস একটি নামী সংবাদমাধ্যমকে এই বিষয়ে বলেন, ‘যারা ওঁর সমালোচনা করেছিল, তাঁদের আমার মেয়ে যোগ্য জবাব দিয়েছে। ওঁকে নিয়ে চলা টোন টিটকিরিও বন্ধ হয়েছে’। পাশাপাশি এও জানিয়েছে, ভবিষ্যতে সুদীপ্তা পড়াশোনা করে যে পথেই যেতে চাক না কেন, তাঁর পরিবার সবসময় পাশে আছে।