প্রয়াত হয়েছেন কিংবদন্তি পরিচালক তরুণ মজুমদার(Tarun Majumdar)। না ফেরার দেশে চলে গিয়েছেন তিনি। কিন্তু মন যেন কিছুতেই মানছে না স্ত্রী সন্ধ্যা রায়ের (Sandhya Roy)। অঝোরে কেঁদে চলেছেন তিনি। স্বামীর অবস্থা সংকটজনক শুনে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে ছুটে গিয়েছিলেন অভিনেত্রী। কিন্তু তরুণবাবু যে বিশেষ চিকিৎসা ব্যবস্থার মধ্যে ছিলেন সেখানে কারোরই প্রবেশের অনুমতি ছিল না। অগত্যা দেখা হয়নি। এবার স্বামীকে হারিয়ে সেই যন্ত্রণাই আরও তীব্র হয়ে উঠেছে সন্ধ্যাদেবীর।
তরুণবাবুর মৃত্যুর পর স্ত্রী সন্ধ্যাদেবীর সঙ্গে একটি নামী সংবাদমাধ্যমের তরফ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছিল। কান্নাভেজা গলায় অভিনেত্রী ফোন তোলার পরেই স্বামী হারানোর হাহাকার করতে থাকেন। তিনি বলেন, ‘কাজ ছাড়া একেবারেই থাকতে পারতেন না। কিছু দিন আগেও ঝাড়গ্রামে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে এসেই কি আরও অসুস্থ হয়ে পড়লেন? হঠাৎ কী হয়ে গেল?’
স্বামী অসুস্থ জানা মাত্রই নাওয়া খাওয়া সব ভুলেছিলেন অভিনেত্রী। একভাবে ঠাকুর ঘরে বসেছিলেন। একটাই প্রার্থনা, যেন তাঁর স্বামী ঘরে ফিরে আসেন। কিন্তু ঈশ্বর শুনলেন না সেকথা। সন্ধ্যাদেবী যখন জেনেছিলেন, স্বামী আর ঘরে ফিরবেন না, দু’চোখের জল আর থামেনি। স্বামীকে হারিয়ে অভিনেত্রী হাহাকার যেন কিছুতেই থামছে না। জানিয়েছেন, ইদানীং দু’জনেই বাইরে বাইরে বেশি থাকতেন। সেই কারণে সেভাবে দেখা হতো না। এখন সেই সবকিছুই বড় বেশি করে মনে পড়ছে বর্ষীয়ান অভিনেত্রীর।
সন্ধ্যা রায়ের জীবনে তরুণ মজুমদারের ভূমিকা প্রচুর। শুধু স্বামী নন, তিনি ছিলেন গুরু। একসঙ্গে কাজ করতে করতে পরিচালকের সঙ্গে ভালোবাসা শুরু হয়েছিল অভিনেত্রীর। এরপর গাঁটছড়া বাঁধেন দু’জনে। এই দুই শিল্পীর জন্য চলচ্চিত্র জগত পেয়েছে বহু নায়ক-নায়িকা। সেই তালিকায় নাম রয়েছে, মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়, তাপস পাল, রাখী গুলজার, দেবশ্রী রায়ের মতো শিল্পীদের। ‘ফার্স্ট লুক’ দেখার পর প্রত্যেক নায়িকাকে নিজের হাতে যত্ন করে সন্ধ্যাদেবী তৈরি করে নিতেন। শুধু তাই নয়, এই তারকা দম্পতি প্রত্যেককে অভিনয়ের পাঠও দিতেন। সেই কারণেই চলচ্চিত্র জগত পেয়েছে বহু সফল এবং জনপ্রিয় ছবি।
স্বামীকে হারিয়ে অভিনেত্রী এখন তাঁর স্মৃতিতে আচ্ছন্ন। জানিয়েছেন, তরুণবাবু কতটা কাজ পাগল ছিলেন। অনেকদিন ধরে দু’জনের যোগাযোগ না থাকলেও, স্বামীর সব খবরাখবর তিনি রাখতেন। এও জানিয়েছেন, পরিচালকের ইচ্ছা ছিল শচীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘জনপদবধূ’ উপন্যাস নিয়ে ছবি বানাবেন। নায়িকা হিসেবে নেবেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তকে। কিন্তু সেই ছবি আর করা হল না।
তরুণবাবু এবং সন্ধ্যাদেবীর জুটির জন্য বাংলা ইন্ডাস্ট্রি পেয়েছে বহু স্মরণীয় ছবি। এই জুটির জনপ্রিয় ছবির তালিকায় নাম রয়েছে, ‘পলাতক’, ‘কুহেলি’, ‘ঠগিনী’র মতো ছবির। তবে শুধু এটুকুই নয়, স্বামী তরুণ মজুমদারের প্রত্যেক ছবিতেই সন্ধ্যা রায়ের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। আর তাই ষাট-সত্তরের দশকটা ছিল এই তারকা জুটির।