দুসপ্তাহের মধ্যে তিন টালিউডের অভিনেত্রীর মৃত্যুতে ইন্ডাস্ট্রির সকলকেই চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। হাসি খুশি মুখের আড়ালে মানসিক অবসাদ কি এমন চরম সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করছে নব প্রজন্মের অভিনেত্রীদের? এই প্রশ্নই বারে বারে উঠে আসছে। সম্প্রতি পল্লবী (Pallavi Dey), বিদিশা (Bidisha Dey Majumder) ও মঞ্জুষা (Manjusha Neogi) এর মৃত্যুর পর অভিনেত্রীদের আত্মহত্যা প্রসঙ্গে মুখ খুললেন শ্রীলেখা মিত্র (Sreelekha Mitra)।
গতকালই রচনা ব্যানার্জীর (Rachana Banerjee) মন্তব্য রীতিমত চর্চার বিষয় হয়ে গিয়েছে। রচনা জানান, টাকা হাতে পেতেই লাইফস্টাইলে পাল্টে যায়। স্ট্রাগল করতেই জানেন না এ যুগের এই মেয়েরা। তাই এই মেয়েগুলোর জন্য তাঁর একটুও কষ্ট হয় না। বরং এদের মা বাবাদের প্রতি কষ্ট প্রকাশ করেন তিনি। কারণ তারা ছোট থেকে মানুষ করে বড় করে তোলেন সন্তানদের। রচনার এই বক্তব্যকে কিছুটা সমর্থন করেছেন শ্রীলেখা মিত্র।
শ্রীলেখার মতে, মানসিক বিপর্যয় থেকে মানুষ ভেঙে পরে এটা ঠিক তবে সব ক্ষেত্রে এই যুক্তি খাতে না। রচনা খুবই দুঃখ ও রাগ থেকে এই কথাগুলো বলেছেন। কারণ তাঁর মনে হয়েছে আরও অনেক সম্ভাবনা ছিল ওদের মধ্যে অনেক বড় হয়ে অনেক কিছুই করতে পারতো ওরা। কিন্তু সে সবের আগেই চলে গেল তিন জন। তবে নিজেকে শেষ করে দেওয়ার মত সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় বুদ্ধি যুক্তি কিছুই কাজ করেন একথাও স্বীকার করেছেন তিনি।
এদিন অভিনেত্রী বলেন, আসলে চরম সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়টা কোনোমতে পেরিয়ে গেলেই লোকে বুঝতে পারে কতবড় ভুল করতে যাচ্ছিল। কিন্তু আজকালকার দিকে মুশকিল হল আমরা সবাই বড্ডো একা। সোশ্যাল মিডিয়া আসায় প্রকৃত বন্ধুর সংখ্যা কমেছে, সবই এখন ভার্চুয়াল। কিন্তু অনলাইনের ভিড়ে বাড়িতে বসে বন্ধুদের সাথে আড্ডা, মজা থেকে মনের ছোট ছোট কথা গুলো শেয়ার করাটা শেষ হয়ে যাচ্ছে।
শ্রীলেখার মতে, আমরা ধীরে ধীরে স্ট্রাগল করে বড় হয়েছি। শুরুতে কম পারিশ্রমিক পেলেও ধীরে ধীরে সেটা বেড়েছে, জনপ্রিয়তাও বেড়েছে। কিন্তু বর্তমানে শুরুতেই ৭০হাজার টাকা পারিশ্রমিক, শহরে বড় ব্যানার একপ্রকার রাতারাতি সেলিব্রিটি হয়ে যাওয়া। এটা বজায় রাখাটাও একটা চাপ, শুরু থেকেই না চাইতে অনেকটা পেয়ে যায় ওরা, কিন্তু আদৌ কি এর জন্য দায়ী ওরা?
এছাড়া সোশ্যাল মিডিয়াতে একদল লোক রয়েছে যারা মৃত্যুর মত দুঃখের খবরেও ‘হা হা’ ইমোজি ব্যবহার করছেন। ঈশ্বর নাই করুন, কিন্তু তাদের যদি বাড়িতে এমন কিছুটাকটা ঘটে তখন কি তারা হা হা রিয়্যাক্ট করতে পারবে? তবে শুধু নেটিজেনদের নয় সংবাদ মাধ্যমকেও কিছুটা দায়ী করেছেন তিনি। কিছু এমন মাধ্যম রয়েছে যারা পাঠক বাড়াতে মুখরোচক খবর তৈরী করেন যেটা মানুষের মনে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে।
শ্রীলেখা মিত্র আরও বলেন, নিজের মেয়েকে মানুষকরতে গিয়ে অনেক কিছু শিখেছেন ও বুঝেছেন তিনি। আজকাল আগের মত শাসন করলেই চলে না, কখনো কড়া হলে কখনও নরম হতে হবে। ভুল করলে সন্তানদের কাছে স্বীকার করতে হবে যে ভুল হয়েছে। তবেই তাঁরা ভরসা করতে পারবে মা-বাবাদের ওপর।