বয়স মাত্র ১৭। আর পাঁচজন সপ্তদশীর মতো মা-বাবা- স্কুল আর পড়াশোনাই জগৎ ছিল দেবানন্দারও (Devananda)। কিন্তু আচমকাই বদলে যায় সবকিছু। ১৭ বছরের ফুটফুটে সেই কিশোরীর দিকেই এখন তাকিয়ে গোটা দেশ। প্রত্যেকে বাহবা দিচ্ছে তাঁকে। এইটুকু বয়সে নিজের বাবার প্রাণ বাঁচানোর জন্য অঙ্গদানের (Organ donation) মতো যে সাহসী পদক্ষেপ দেবানন্দা নিয়েছেন তা দেখে মুগ্ধ হয়েছেন প্রত্যেকে।
দেবাবন্দা কেরালার ত্রিশূরের স্যাকরেড হার্ট কনভেন্টের ছাত্রী। বাবার নাম প্রতীশ। সেই ত্রিশূরেরই একটি ক্যাফের মালিক। স্ত্রী এবং মেয়েকে নিয়ে সুখের সংসার প্রতীশের। সবকিছু বেশ ভালোই চলছিল। কিন্তু আচমকাই তাঁদের সেই সুখের সংসারে ঝড় ওঠে। জানা যায়, লিভারের এক দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছেন প্রতীশ।
শুধু এটুকুই নয়, জানা যায়, চিকিৎসা শুরু করতে যদি বেশি দেরি করা হয় তাহলে এই মারণরোগ প্রতীশের সম্পূর্ণ শরীরে ছড়িয়ে পড়বে। তখন তাঁর প্রাণ বাঁচানো হয়ে যাবে আরও মুশকিল। চিকিৎসকেরা স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন, লিভার প্রতিস্থাপন (Liver donation) করলেই একমাত্র প্রাণে বাঁচবেন প্রতীশ। নাহলে সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে।
একদিকে অঙ্গদাতা খোঁজা, অপরদিকে চিকিৎসার বিপুল খরচ- সব মিলিয়ে দেবানন্দা এবং তাঁর মায়ের মাথায় তখন আকাশ ভেঙে পড়েছে। শেষমেষ ১৭ বছরের দেবানন্দা ঠিক করেন, বাবার প্রাণ বাঁচাতে সে নিজে এগিয়ে আসবে, দান করবে নিজের লিভারের অংশ। কিন্তু এখানে বাধা হয়ে দাঁড়ায় ভারতের অঙ্গ প্রতিস্থাপন সংক্রান্ত আইন।
এদেশের নিয়ম অনুযায়ী, প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া অবধি অর্থাৎ ১৮ বছর না হওয়া অবধি কেউ অঙ্গদান করতে পারবে না। তবে দেবানন্দা হার মানতে নারাজ। সোজা কেরল হাইকোর্টে পৌঁছে যায় সে। আদালতকে জানায়, এর আগেও একবার একজন অপ্রাপ্তবয়স্ককে অঙ্গদানের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। এক্ষেত্রেও তাঁর বাবার জন্য কোনও অঙ্গদাতাকে পাওয়া যাচ্ছে না। তাই তাঁকে অনুমতি দেওয়া হোক। কিশোরীর যুক্তি শুনে অঙ্গদানের অনুমতি দেয় কেরালা হাইকোর্ট।
এরপরই আসে সেই দিন। গত ৯ ফেব্রুয়ারি রাজাগিরি হাসপাতালে ১৭ বছরের দেবানন্দার অস্ত্রোপচার হয়। মেয়ের অঙ্গদানে নতুন জীবন পায় প্রতীশ। উল্লেখ্য, সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দেবানন্দার অস্ত্রোপচার করেছেন রাজাগিরি হাসপাতাল। ১৭ বছরের কিশোরীকে কুর্নিশ জানিয়েছেন কেরালা হাইকোর্টের বিচারপতি স্বয়ং। মেয়ের এমন সাহস ও লড়াই দেখে চোখ ভিজেছে প্রতীশেরও। আর এখন তো প্রত্যেক ভারতবাসী দেশের সর্বকনিষ্ঠ অঙ্গদাত্রীকে কুর্নিশ জানাচ্ছেন। বাবার প্রতি মেয়ের ভালোবাসা দেখে মাথা নত করছেন প্রত্যেকে।