বিনোদনের কথা উঠলেই সবার আগে চলে আসে সিনেমার কথা। আর সিনেমা মানেই অভিনেতা অভিনেত্রী, তবে শুধু তারাই নয় একটা ছবি দর্শকদের কাছে সঠিক পৌঁছে দিতে যথেষ্ট অবদান থাকে পরিচালকেরও। বিগত দু দশকেরও বেশি সময় ধরে নিজের ফিল্মি কেরিয়ার টিকিয়ে রেখে ছিলেন পরিচালক প্রেমাংশু রায় (Director Premangshu Roy)। কিন্তু পরিচালনার দক্ষতা থাকলেও কাজ নেই তাঁর কাছে।
কয়েক মাস আগেই সোশ্যাল মিডিয়ার কাছে হাত পেতেছিলেন পরিচালক। জানিয়েছিলেন সিরিয়ালের চিত্রনাট্যও লিখতে পারি আমি, যদি কেউ কাজ দেন উপকৃত হব। অথচ সেই কাতর আর্তি বৃথাই গিয়েছে। ২৭ বছর ধরে পরিচালনার অভিজ্ঞতা নিয়েও বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে (Bengali Industry) কর্মহীন প্রেমাংশু রায়। শেষে বাধ্য হয়েই জীবনের ২৭ বছরের পরিশ্রমের ফল ফেলে রেখে ফাস্ট ফুডের দোকান দিলেন পরিচালক।
হ্যাঁ ঠিকই দেখছেন, দু দশকের বেশ সময় ধরে পরিচালনার অভিজ্ঞতা সত্ত্বেও আর্থিক স্বচ্ছলতা আসেনি। শেষে বাংলা নবর্ষের দিনেই সিদ্ধান্ত নিলেন পরিচালকের পথ থেকে সরে দাঁড়াবেন। আর শুরু করেন খাবারের দোকান ‘সূচক ফুড কর্নার’। বাগপোতা রোডে ‘নিউ ভিস্তা আকাদেমি’ স্কুলের উল্টো দিকেই এই দোকান। যে সোশ্যাল মিডিয়াতে কাজের আর্তি জানিয়েও কাজ পাননি সেই সোশ্যাল মিডিয়াতেই নিজের নতুন পথ চলার গুটিকতক ছবি শেয়ার করে নিয়েছেন তিনি।
ছবি দেখলেই বোঝা যাচ্ছ, সকালের জলখাবার থেকেই সন্ধ্যের মুখরোচক ফাস্ট ফুড, এমনকি লোভনীয় বেশ কিছু খাবার মিলবে তাঁর দোকানে। শুধু তাই নয় পছন্দের খাবার বাড়ি বসেই ডেলিভারিও পেয়ে যেতে পারেন। বড় বড় করে লেখা রয়েছে হোম ডেলিভারির জন্য যোগাযোগ করুন। সাথে রয়েছে ফোন নাম্বারও।
কিন্তু জীবনের ২৭টা বছর বাংলা ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক হওয়ার পরেও কেন এমন একটা সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি? শুধুই কি আর্থিক সমস্যা ? নাকি আরও অন্য কারণ প্রভাব বিস্তার করেছে তাঁর এই সিদ্ধান্তের ওপর! এর উত্তর বাতলে দিয়েছে তাঁরই ফেসবুকে শেয়ার করা একটি পোস্ট।
সম্প্রতি ফেসবুক পোস্টে তিনি জানিয়েছেন, নাট্য জগতের প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ত্বদের কারণেই আজ তিনি নিজের কেরিয়ার থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছেন। প্রেমাংশু লিখেছেন, ‘২৭ বছর নাট্য জগতে থেকে কাজ করার পর বুঝলাম মানুষ চিনতেই শিখিনি আমি। সাতাশ বছর নাট্য যাপন করে যদি মানুষ চিনতেই না পারি, তাহলে নিজেকে নাট্য কর্মী বা শিল্পী পরিচয় দেওয়াটা মানায় না’। অবশ্য ইন্ডাস্ট্রির কারও নাম নিয়ে কোনো অভিযোগ করেননি তিনি।
তাঁর মতে, এ জগতে সবাই ভালো শুধু তিনি ছাড়া। এরপর যারা ক্ষতি করতে চেয়েছিল তাদের প্রতি বার্তা দিয়ে লিখেছেন, আমি যাতে কাজ না করতে পারি সেটা নিয়ে সময় নষ্ট করবেন না আমি নিজেই সরে গেলাম। ভালো থাকুন, আপনাদের হাত ধরেই বাংলা থিয়েটার এগিয়ে চলুক। এরপর অবশ্য খানিক চাঁচাছোলা ভাষাতেই আশ্বাস দেন, অনেকের অনেক উত্তর দেওয়া বাকি রয়ে গেল, মুখোশধারীদের মুখ খুলে দেওয়া ও নিজের স্বপ্নের কাজও অসম্পূর্ন রয়েছে।
তবে নিন্দুক তথা শত্রুদের উদ্দেশ্যে জানান, রাজনীতি মিথ্যাচার, শিল্পীদের কেরিয়ার নষ্ট করে দেওয়া, আর চাটুকারিতা নিয়েই নাতী যাপন করতে থাকুন, এবার আমার দেখার ও শোনার সময়। তবে এতকথার শুরুতেই প্রথম কারণ হিসাবে তুলে ধরেন নিজের আর্থিক সমস্যার কথা।